রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস : ইতালিজুড়ে মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ

করোনাভাইরাস : ইতালিজুড়ে মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশ জুড় জরুরী কর্মকাণ্ড বাড়িয়েছে ইতালি। এর মধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং জনসমাগমে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী জুজেপ্পে কন্টে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জরুরী ভ্রমণের ক্ষেত্রেও অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন যে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষদের সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘হাতে আর সময় নেই।’

সোমবার ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬৬ থেকে ৪৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের পর এটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ। সরকারি হিসাব বলছে, রবিবার থেকে নিশ্চিতভাবে আক্রান্তের সংখ্যাও ২৪% বেড়েছে। ইতালির ২০টি এলাকার সবকটিতে ভাইরাস আক্রান্তের খবর মিলেছে।

ঘরে থাকুন:

প্রধনমন্ত্রী জুজেপ্পে কন্টে বলেন, সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। ‘আমাদের এখানে সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে…আর সেই সাথে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে,’ সন্ধ্যায় দেয়া এক ভাষণে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন,‘পুরো ইতালি একটি সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত হবে। ইতালির স্বার্থে আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আর এটা এখনই করতে হবে। এজন্যই সংক্রমণ ঠেকাতে এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিতে আমি আরো বেশি দৃঢ় ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

লা রিপাবলিকা সংবাদপত্রকে দেয়া এর আগে এক সাক্ষাৎকারে প্রাদুর্ভাব নিয়ে তিনি বলেন: ‘এই মুহূর্তে আমার চার্চিলের সেই পুরনো কথা মনে পড়ছে…এটা আমাদের সবচেয়ে অন্ধকারতম সময়, কিন্তু আমরা এটি অতিক্রম করবো।’

নিষেধাজ্ঞাগুলো কী কী?

মিস্টার কন্টে এক কথায় নিষেধাজ্ঞা বোঝাতে বলেছেন, ‘বাড়িতে থাকুন’- সেই সাথে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

‘রাতের জীবন আর থাকবে না; আমরা এগুলোর অনুমতি দিতে পারি না কারণ এগুলো সংক্রমণের উপলক্ষ তৈরি করে,’ তিনি বলেন। ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরণের খেলাধুলার অনুষ্ঠান সারা দেশে বাতিল করা হয়েছে। স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

সরকার বলছে, শুধুমাত্র যাদের এমন কোন দাপ্তরিক কাজ রয়েছে যা বাতিল করা সম্ভব নয় কিংবা এমন কোন পারিবারিক জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় শুধু তারাই ভ্রমণ করতে পারবে। বিমান যেসব যাত্রী আসা-যাওয়া করবেন তাদের সবাইকেই প্রমাণ করতে হবে যে তারা অসুস্থ নন। ট্রেন স্টেশনে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। বিভিন্ন বন্দরে প্রমোদ জাহাজ নোঙর করার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

সাধারণ মানুষ একে কীভাবে দেখছে?

সোমবার ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর অংশ হিসেবে কারাবন্দীদের সাথে সব ধরণের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণার পর জেলের ভেতরে দাঙ্গায় সাত জন বন্দী নিহত হয়। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সান্তা’আন্না কারাগারে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। ধারণা করা হচ্ছে যে, কারাবন্দীরা জেলের একটি হাসপাতালে হেরোইনের বিকল্প হিসেবে মেথাডোনের খোঁজে হামলা চালালে ওই মাদকের মাত্রাতিরিক্ত সেবনের কারণে দুই জন প্রাণ হারায়।

কর্তৃপক্ষ জানায়, মিলানের সান ভিত্তোর কারাগারে বন্দীরা একটি সেল ব্লকে আগুন দিয়ে জানালা দিয়ে ছাদে উঠে ব্যানার নাড়াতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের ফোজিয়া শহরের একটি কারাগারে বিক্ষোভের সময় কয়েক ডজন বন্দী জেল ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে। অনেকেই তাৎক্ষনিকভাবে গ্রেফতার করা হয়। তবে নয় জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ইতালির নেপলস, রোম ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি কারাগারে এখনো দাঙ্গা চলছে।

বিশ্বের অন্যান্য স্থানে কী হচ্ছে?

পুরো বিশ্বে এখন আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার জন এবং মৃতের সংখ্যা ৩৮৯০ জন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশটিতে এখন যারাই পৌঁছাবে তাদের সবাইকে স্বেচ্ছায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে এই রোগে আরো ৪৩ জন মারা যাওয়ার কথা জানানো হয়। মধ্য ফেব্রুয়ারির পর থেকে দেশটিতে ৭১৬১ জন আক্রান্ত এবং ২৩৭ জন মারা গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো বেশি বলে ধারণা করা হয়।

চীনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা থাকলেও দেশটিতে একদিনে নতুন করে ৪০ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে যা গত ২০শে জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন। যদিও দেখা যাচ্ছে যে দেশটিতে সংক্রমণের হার কমে আসছে, তবু শঙ্কা থাকছে যে, হয়তো সব ঘটনা নজরে আসছে না।

অন্যান্য স্থানের কী অবস্থা?

•বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে, বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ার “সম্ভাবনা খুবই বাস্তব।”

•ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে কানাডা- ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভাঙ্কুভারে এক প্রবীণ নিবাসে একজন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

•ফ্রান্সে সংস্কৃতি মন্ত্রী ফ্র্যাংক রিস্টার সরকারের প্রথম সদস্য যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার দলের সদস্যরা বলেছে যে, গত সপ্তাহের বেশ কয়েক দিন তিনি পার্লামেন্টে কাটিয়েছেন। যেখানে আরো অনেকে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে।

•যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে

•হাজার হাজার আরোহী নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসের কারণে সাগরে আটকে পড়া একটি প্রমোদ জাহাজ সান ফ্রান্সিসকোর কাছে অকল্যান্ড বন্দরে নোঙর করেছে

•প্রাদুর্ভাবের অর্থনৈতিক ক্ষতি ও অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কার মুখে সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারে ধস অব্যাহত রয়েছে। সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877